মহান আল্লাহর অন্যতম গুণ ক্ষমা। সুন্দর সমাজ গঠনের জন্য মানুষের এ গুণটি থাকা খুবই প্রয়োজন।
ক্ষমার আরবি প্রতিশব্দ 'আফ্টন' -এর অর্থ মাফ করা, প্রতিশোধ গ্রহণ না করা। ইসলামি পরিভাষায় এর অর্থ হলো প্রতিশোধ গ্রহণের পূর্ণ ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও প্রতিশোধ না নিয়ে মাফ করে দেওয়া।
গুরত্ব
মহান আল্লাহ সর্বশক্তিমান। তিনি মানুষকে অনেক নিয়ামত দান করেছেন। মানুষের সুখ-শান্তির ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু মানুষ তার অজ্ঞতার কারণে সেই সর্বশক্তিমান প্রভুর কথা ভুলে যায়, তার হুকুম অমান্য করে, তার সাথে অংশীদার স্থাপন করে। পরে যখন মানুষ নিজের ভুল বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হয় এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, তখন আল্লাহ মানুষকে ক্ষমা করে দেন। মহান আল্লাহর ঘোষণা "তিনিই তার বান্দাদের তওবা কবুল করেন এবং পাপসমূহ ক্ষমা করেন।" (সূরা আশ-শুরা, আয়াত ২৫)
আল্লাহ সর্বশক্তিমান ও মহাপরাক্রমশালী হওয়া সত্ত্বেও মানুষকে ক্ষমা করে দেন। মহান আল্লাহ তার রাসুল (স.)-কে ক্ষমার নীতি অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেছেন,
خُذِ الْعَفْوَ وَأْمُرْ بِالْعُرْفِ وَأَعْرِضْ عَنِ الْجَهِلِينَ
অর্থ: "আপনি ক্ষমা করুন, সৎকাজের নির্দেশ দিন এবং অজ্ঞদেরকে এড়িয়ে চলুন।" (সূরা আল-আরাফ, আয়াত ১৯৯) মহান আল্লাহ আরও বলেন,
فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمْ
অর্থ: "অতএব, আপনি তাদের ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন।" (সূরা আলে-ইমরান, আয়াত ১৫৯)
যেসব মানুষ আল্লাহ এবং তার দেওয়া বিধান অমান্য করে, পরবর্তীতে অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থী হয় সর্বশক্তিমান আল্লাহ সেসব বান্দাকে ক্ষমা করে দেন।
ক্ষমার ব্যাপারে মহান রাব্বুল আলামিনের নীতি ও আদর্শ আমাদের অনুসরণ করা আবশ্যক। মানুষ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়, কোনো কাজে বা কথায় তার ভুলত্রুটি হয়ে যেতে পারে। অতএব, অন্যের ভুলভ্রান্তি, ত্রুটি-বিচ্যুতিসমূহ ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে আমাদের দেখা উচিত।
মানুষকে ক্ষমা করলে আল্লাহ খুশি হন এবং যে ক্ষমা করে আল্লাহ তার গুনাসমূহ ক্ষমা করে দেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,
وَإِنْ تَعْفُوا وَتَصْفَحُوا وَتَغْفِرُوا فَإِنَّ اللهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
অর্থ: "আর যদি তুমি তাঁদের মার্জনা কর, তাঁদের দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা কর এবং ক্ষমা কর, তবে জেনে রেখো আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।" (সূরা আত-তাগাবুন, আয়াত ১৪)
মহানবি (স.) ছিলেন ক্ষমার মূর্ত প্রতীক। একবার এক ইহুদি মহিলা প্রিয় নবি (স.)-কে তার বাড়িতে দাওয়াত দেন এবং বিষ মিশ্রিত ছাগলের গোশত তাঁকে খেতে দেন। রাসুল (স.) উক্ত গোশতের কিছু খেতেই বিষক্রিয়া অনুভব করেন। পরে ঐ মহিলা গোশতে বিষ দেওয়ার কথা স্বীকার করে। কিন্তু প্রিয় নবি (স.) তাকে ক্ষমা করে দেন। এমনিভাবে মক্কা বিজয়ের পর মহানবি (স.) প্রাণের শত্রুদেরকেও ক্ষমা করে দেন। তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, 'আজ তোমাদের বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই। তোমরা মুক্ত স্বাধীন।' পৃথিবীর ইতিহাসে এরূপ ক্ষমার উদাহরণ আর দ্বিতীয়টি নেই। অপরাধীকে ক্ষমা করলে অপরাধী লজ্জিত হয়ে অপরাধ ছেড়ে দেয়। শত্রুকে ক্ষমা করলে শত্রু বন্ধুতে পরিণত হয়। আমরা অন্যকে ক্ষমা করব। অন্যকে ভালোবাসব।
একক কাজ: শিক্ষার্থীরা ক্ষমার ছোট ছোট ঘটনা যা নিজের জীবনে ঘটেছে, তা নিজের ভাষায় লিখে শিক্ষককে দেখাবে। |
বাড়ির কাজ: ক্ষমার গুরুত্ব বর্ণনা কর। |
Read more